প্যারিস রোড়ে...।।। একটি স্বপ্নের যাত্রা
- সাজ্জাদ আলম - ছোট গল্প ১৭-০৫-২০২৪

আজ তোমাকে বলেই দিব নাকি তুমি যে আমার মন সাগরে ডুব - সাঁতার কাটতেছ প্রস্তাবটা দিয়েই ফেলি নাকি? হোক না যায় কিছু ভালবাসা নাকি বেদনা, হয়ে যাগ অচেনা পথে আরো কিছু দিন পথ চলা। এই, তুমি কি জানো তোমাকে নিয়ে কত কল্পনা করি........ সবই যেন নিকাশ কল্পনা, নেই কোন বাস্তবতার ছোঁয়া। তবে স্বপ্নে ভাসে তোমার রাঙ্গা মুখখানি যার সাথে মিশে আছে তোমার ঐ মুচকি হাসি। প্রথম দেখায় আমার হৃদয় তরঙ্গ নানা রংঙ্গে সেঁজেছিল মনের বাতায়নে যেন বিরহী সুর বাজছিল, আমি যেন আমাতে নেই যেন অন্য কেউ,সেই সুরে মাতাল হয়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম সে পথ ধরে। কত না চিন্তাই করেছি যা বাস্তবে হয়ত বা অসম্বভ। তোমার হৃদয় মাঝে অপ্রত্যক্ষ ভাবে বিচরণের কামনাকে উপলব্ধি করা যেন অসম্বভ কিছু কল্পনা করা। হঠাৎ করে এসে তুমি আমার হৃদয় মাঝে জায়গা করে নিয়েছ নিজের অজান্তে দিয়েছি তোমায় মন, তুমি এখন আমার সবটুকু আরাধনা অথচ তুমি বাস্তবে কত দূরে যেন আমার চোখের অগোচরে তবুও তোমার রুপ,তোমার চলন সবকিছু যেন আমার অনেক চেনা মনে হয় এসব আমার কতদিন আগের পরিচিত। নিজের অজান্তে মন বলে ওঠে মোরে,

"আমি চলে যেতে চাই
ঐ পথ ধরে,
যেখানে আমার জন্যে কেউ আছে
অপেক্ষা করে।
জানি না
জানি না-
বুঝি না
বুঝি না-
সে কি আমায় ভালবাসে।
জানি না কেউ বলবে কি মোরে,
আমি আছি তোমারি অপেক্ষায় -
আছি আমি তোমারি অপেক্ষায়।"

প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছি, সে দিন প্যারিস রোড দিয়ে যাচ্ছিলাম উদ্দেশ্য কোথায় নিজেও জানতাম না পশ্চিম পাড়া নাকি ইবলিশ চত্বর,দেখি ও পাশ থেকে তুমি হেঁটে আসছিলে। আমি আনমনে হাঁটছিলাম - তোমাকে দেখেই থমকে দাঁড়ায়। না, তুমি আমাকে দেখনি, তুমি হেঁটে হেঁটে শহীদ মিনারের দিকে চলে গিয়েছিলে। ইচ্ছেতো করছিল আমিও তোমার সাথে সাথে হাঁটি। কিন্তু এমন কি আর করা যায়, আর আমার বেমানান শারীরিক গঠন নিয়ে তোমার সামনে যেতেও লজ্জা লাগছিল। তারপর ও কিছুক্ষণ হাঁটলাম কাছে যেয়ে তোমার মায়াবী মুখটা দেখেছিলাম। যতক্ষণ পেরেছি তোমাকে অনুসরণ করেছি। শেষ পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছি।

তোমার ভাবনায় যতক্ষণ ছিলাম শুধু কল্পনা করেছি তোমায় নিয়ে কিন্তু তুমি তো একবার ও আমার দিকে তাকালে না। আমার মন খুব খারাফ হয়ে গিয়েছিল। তারপর যে দুই দিন দেখেছি তোমাকে, রিক্সাতেই ছিলে, তুমি একবার ও আমার দিকে তাকাওনি। কেন? আমি দেখতে ভালো নই বলে? তুমি কি জানো? আমার স্বপ্নে ভাসো তুমি। তোমার কথা মনে পড়লেই মনে পড়ে তোমার ঐ মুচকি হাসি, ঘাস গুলো মাড়িয়ে চলে গিয়েছিলে আমায় স্বপ্নে ভাসিয়ে। মাঝখানে কিছুদিন কেটে গেল,অনেক কিছু হয়ে গেল,তবুও স্মৃতিতে ভাসো তুমি যেন তুমি আমার চিরচেনা কেউ। ক্যাম্পাসে আসি আর মিস করি তোমায় যে দিকে তাকায় মনে হয় তুমি চেয়ে আছো আমার দিকে। আমার স্মৃতিতে এখনো অম্লান তুমি। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায় সেই প্যারিস রোড যেখানে তোমাকে প্রথম দেখেছি, শহীদ মিনার তারপর সাবাশ,দেখি কোথাও নেই তুমি মনটা তখন হতাশ হয়ে যায়।



তুমি কি জানো? এখনো তোমার নামটা জানা হল না। তোমার একটা নাম দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু, জুতসই কোন নাম পেলাম না, বুঝছ? নীল চোখের মেয়েদের নাম সাধারণত কেউ যদি দেয় তবে তার নাম নীলাঞ্জনা দেওয়া হয় তার চোখের সাথে মিল রেখে। কিন্তু তোমার মতো বাদামী চোখের মেয়েদের কী নামে ডাকা যায়, সেটা কেউই ভাবল না। আমি এতটা ভাবুক ও নই যে নিজেই তোমার একটা নাম দিয়ে দেব। প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম, সেদিন তুমি নীল একটা সালোয়ার কামিজ পরেছিলে। অন্য কেউ হলে হয়তো নীলিমা, নীলা- জাতীয় একটা নাম দিয়ে দিত। কিন্তু আমি এসব পারি না, বুঝছ? তো, সেই প্রথম দেখার পর আর ও দুই দিন দেখেছি তোমাকে। এই তিন দিনের প্রতিটি দিনই তোমাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি, বুঝেছ?

বৃষ্টি ভেজা মেঘলা দিনে বসে আছি রবীন্দ্র ভবনে দেখি একটি মেয়ে ঠিক যেন তুমি, যেন নীলাম্বরী বৃষ্টির ঝিরি ঝিরি হাওয়ায় তার চুল গুলো উড়ছিল মনটা কেমন নাড়া দিয়ে উঠল। হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় তাকে দেখে খুব বেশি চেনা চেনা লাগছিল, কাছে যেয়ে দেখি তুমি না অন্য কেউ, আজকাল আমি নীল পোশাকে কোন মেয়েকে দেখলে তোমার কথা মনে পড়ে আর হৃদয়ের ক্যানভাসে তোমার স্মৃতি দোলা দিয়ে ওঠে। তুমি কি কখনো আমার সাথে কথা বলবে না? তোমার সাথে কি আমার আর দেখা হবে না? কিন্তু তোমায় আর কোথাও দেখি না কেন? নাকি তুমি আমাকে দেখলে লুকাও। আমাকে তোমার পছন্দ নই বলে নাকি আমি দেখতে ভাল নই বলে? অথচ তুমি কি জানো? তোমার জন্যে আমার সব স্বপ্ন, আমার সব ভালবাসা, তুমি কি জানো তোমাকে কত ভালবাসি এখনো ভাবি আনমনে বসে একা আমার এ জীবনে আসবে তুমি আর ভরিয়ে দেবে মায়া মমতায় প্রেম ভালবাসায়। এ জীবনে অনেক বার স্বপ্ন সাঁজিয়েছি বারে বারে ঝড় আসে কেন? আমার স্বপ্ন গুলো ভেঙ্গে দিয়ে যায় বলতে পার কেন? তুমি আমার দিকে কেন তাকাও না?


আমাকে নাকি দেখতে ভাল হতে হবে। তাহলে নাকি তুমি আমার দিকে তাকাবে। তাই এখন আমার চলা ফেরায় অনেক পরিবর্তন এনেছি, এখন আমি যা তা পরে রুম থেকে বাইরে যায় না আমার পোশাকে আর রুচিতে ভিন্নতা এসেছে। ব্যায়াম ও করি আজকাল। আমি একটু মোটা তো, তাই। বন্ধুরা বলেছে, আমি ফিট না হলে নাকি তুমি আমাকে পছন্দ করবে না। আর আমি এখন পড়াশোনা ও নিয়মিত করি। শুনেছি, তুমি নাকি অনেক বড়লোকের মেয়ে তোমার বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামিদামি বিভাগের শিক্ষক। তাই আমাকে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, না হলে নাকি তুমি আমাকে পছন্দ করবে না।

আর, তুমি কী করো? একটিবার ও ফিরে তাকিয়েছ আমার দিকে? অবশ্য তোমার ও দোষ কী, তোমাকে জানাতেই পারলাম না যে কতটা ভালবাসি। তাই শেষ পর্যন্ত এই উপায় বের করলাম তোমাকে জানানোর জন্য। কেন জানি মন বলেছে, তুমি এ লেখা পড়বে। আমি জানি, এরপর থেকে প্যারিস রোডে, রবীন্দ্রকলা ভবনে আর শহীদ মিনারের পথ বেয়ে ক্যাম্পাসে যখন তুমি হাঁটবে কালোমতো, মোটা করে, বাউলা চুলে কোনো ছেলেকে দেখলেই তুমি বুঝে ফেলবে, এটা আমি। তখন তুমি তাকাবে না আমার দিকে? বলো, তাকাবে না?

তাই আজ বলতে ইচ্ছে করে রুদ্ধশ্বাসে
মনের সন্ধিক্ষণে-
"আমার ও চলা
কিছুটা যেন পথ ভুলা
তবু ও আমার তরী
তুলেছে পাল তোমার ও অভিপ্রায়ে।"

[ সমাপ্তি ]

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।